রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১১

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়

"জানবো এই পাপী হতে
                যদি এসেছো হে গৌর জীব ত্বরাতে।।"

আমরা যারা সমাজে উচ্চশ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করি তারা নিম্নশ্রেণীর মাঝে প্রতিভার স্ফুরণ দেখলে ভীত হয়ে উঠি। সেই জন্যই বোধ হয় লালন আমাদের পল্লীসমাজের অন্তরঃস্খল থেকে উৎসারিত হলেও তাকে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। শহুরে কবিদের অধিপত্যে তাই তাকে জানতে আমাদের ব্যাক্তিগতভাবে উৎসুক হতে হয়। কুষ্টিয়ায় গিয়ে আমি প্রথম লালন সম্পর্কে আগ্রহী হই। এরপর তাকে যতই জানছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।

" সহজ মানুষ ভজে দেখ দেখী মন দিব্যজ্ঞানে
                 পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে।।"

লালনে দর্শন খুব সাধারণ। তাকে বাউল/ফকির পরিচয় হিসেবে সমাজের বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হলেও তিনি ছিলেন স্বাভাবিত মাত্রায়  সামাজিক-সংসারী। এরকম উঁচুমাত্রার দার্শনিকের অস্তিত্ব তৎকালীন সমাজের জন্য এমনকি বর্তমান সমাজের জন্য বিব্রতকর বলেই কি তাকে একরকম একঘড়ে করে রাখা হয়েছে? রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের, জসীমউদ্দিন-এর পাশে তাকে রাখতে সমস্যা কোথায়? রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে একরকম সাম্প্রদায়িক পরিচিতিতে ভাগ করা সম্ভব হলেও লালন ও তার দর্শন সম্পূর্নভাবে মুক্ত যে কোন রকম বন্ধন হতে। অন্য যে কারও থেকে আমাদের সমাজের আদি সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন লালন-আমাদের শেকড়ের অনেক কাছাকাছি।

" বাড়ির কাছে আড়শিনগর
সেথায় এক পড়শী বসত করে
                  আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।।"

খাঁচার ভিতর অচিন পাখিকে মনোবেড়ি দেবার সাধনা সব মানুষের। এই অচিন পাখি জীব ও জড়ের মধ্যে পার্থক্য । খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়??? লালনের এই সাধারণ প্রশ্নের উত্তর কি মানব সভ্যতা আজো বের করতে পেরেছে।
লালনের আরাধণা তাই মানব নিয়ে-মানুষের দরশন নিয়ে। এই মানবের মাঝে সেই মানুষ আছে। সেই মানুষের খোঁজে লালন।

"যা ছুঁইলে প্রাণে মরি
এ জগতে তাইতে তরি
বুঝেও তা বুঝতে নারি
                কীর্তিকর্মার কী কারখানা।।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন