শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮

ঈদের আগের দিন-রাত ১০টায় গাবতলী হাটে.......

ঈদের পর ভারী পেট নিয়া ব্লগ লিখতে আলস্যবোধ করিতেছি.....যাই হোক...ঘটনা হইলো ঈদের আগের দিন। আমাদের গরু বিকালের দিকে তালতলা হতে কেনা শেষ। বিকালেই আবার ধানমন্ডি স্কুলের সামনে হতে একটা খাসিও কিনা হলো।

তালতলায় গরু কেনার সময় আমি যাই নাই। শুধু গরু বাসার নিচে আসলে তার ফুটু খিচি। অবশ্য ছাগলা কেনার সময় আমি গেছিলাম আব্বুর সাথে।

সমস্যা হইলো সন্ধ্য সাতটার দিকে। আমার ছোটকাক্কু ফোন কইরা জানালেন তাদের এখনো গরু কেনা হয় নাই। কারন কাক্কু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ছোটকাক্কুরা থাকে আদাবর। আব্বুকে ডাকতেছেন, গরু কিনতে যাওয়ার জন্য। আবার সারাদিন গরু আর খাসি কিনার ধকলের পর আব্বুও টায়ার্ড। তাই যাইতে হলো আমাকে। আর গিয়াই পড়লাম বাটে।

যাইয়া দেখি কাক্কু ভীষণ অসুস্থ । আমি ভাবছিলাম হয়তো সিনিয়ার কেউ যাবে গরু কিনতে আর পিছে পিছে হয়তো যামু আমি। কিন্তু গিয়া দেখি কেউই নাই। শুধু আমাদের দেশের বাড়ি থেইকা আসা একজন ভদ্রলোক নাম রানা, আর কাক্কুদের ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া এক ভদ্রলোককে আমার সাথে দেয়া হলো। আমি ঢোক গিললাম। আর ২৫০০০ টাকা দেয়া হইলো যে মুটামুটি ছোটখাট একটা গরু কিন্না নিয়া আসার জন্য। কাক্কুর বাসা হইতে বাড়াইতে বাড়াইতে সাড়ে আটটা বাইজা গেল।

প্রত্থমে গেলাম তালতলা, যাইয়া দেখি হাট ফাঁকা। ছোট গরু নাই। কিছু বড় বড় গরু আছে যেইগুলার দাম পচিঁশ হাজারের ধারে কাছেও না। ব্যাচেলর ভদ্রলোক বললেন উপায় নাই গাবতলী যাইতে হবে। আমি বলিলাম তথাস্তু।

গাবতলী যাবার পথে সেরাম জ্যাম। হাটের কিছুদুর আগে নাইমা হাটা দিলাম। হাটে পৌছাইলাম তখন প্রায় সোয়া দশটা বাজে। এইখানেও ছোটগরু নাই। যে কয়টা আছে সবগুলা ইতিমদ্যে দালালের হাতে গ্যাছে গা। যেইটার দাম জিগাই কয় বেয়াল্লিশ- পয়তাল্লিশ। আমি আর কত নামায়া কমু। গলা জরাইয়া কানের কাছে মুখ নিয়া কই আঠারো। ব্যাটারা আমারে তো পাত্তাই দেয় না, কয় তিরিশের উপরে উঠতে পারলে কইয়েন। রানা সাহেব আবার গরুর দাত-দুত চিনেন। আমি আর আরেকজন চিনি না। এই দাতের লাইগা চার-পাঁচটা গরু ছাইড়া দিলাম। এক বিক্রেতারে বিড়ি দিয়া আলাপ জমাইয়া প্রায় বিশ মিনিট পর আবিষ্কার হইলো গরুর দাতে প্রবলেম। আমি রানা সাহেব রে বললাম, কুরবানী হইবো কিনা কন, হইলে নিয়া নেই দামে বনছে। কিন্তু রানা সাহেবের ভেটোতে নিতে পারলাম না। সব নেগোশিয়েশন পানিতে গেল।আর আরেক ভাইজান তো অস্থর হইয়া গেছে পারলে যে কোন একটা কিন্নাই যায় গা, হে দেখলাম রানা সাহেবের উপর ত্যাক্ত। হের দাত সংক্রান্তু ভেটোতে চার-পাঁচটা গরু ছাইড়া দিতে হইছে। মাঝখানে একটা টি ব্রেক লইলাম, বাদাম খাওয়া হইলো আর বিস্কুট।

রাত বাড়টা বাজে গরু পাই না। দাম তো আগের মতোই ৪০-৪৫-এর কম কেউ কয় না। এদিকে উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়া যাই নাই বইলা আমার অ্যাপেক্স্রের স্যান্ডেল আর জিন্স ক্যাদা-গোবর দিয়া একাকার। গরু পাড়াও খাইছি মাশাল্লাহ। অবশেষে প্রায় পৌনে একটার দিকে এক বিক্রেতার লগে হালকা আলাপে বুঝলাম হে বেচবো। তারে মামা, আঙ্কেল কইয়া ত্যালাইলাম। গলা জড়াইয়া ধইরা ফিস ফিস কইরা দাম কষাকষিতে নামলাম। বিড়ি-বুড়ি খাওইলাম( নেগোশিয়েশনে বিড়ি একটা চমৎকার জিনিস!!!)। প্রায় আধা ঘন্টা কুস্তাকুস্তি কইরা দাম ২৫-শে ঠিক হইলো। একটা রাখাল লইলাম ১৫০ টাকায়। আমি তো খুশি। চাচিরে ফোন দিয়া জানাইলাম।

কাহিনী হইলো হাসিলে। হাসিল হইলো হাজারে পন্চাশ। ২৫ হাজারই ছিলো আমার কাছে সব গরু ওয়ালারে দিয়া দিলাম। কইলাম হাসিল এর থাইকা দেন আমাদের কাছে টাকা নাই। সে রাজিই হইলো না। কি আর করা আমার মানিব্যাগ ঘাইটা রাড়াইলো ৭০০, ব্যাচেলর ভাই দিলো ৫০০, রানা সাহেব দিলেন ২০০ আরো খুচরা খাচরা মিলাই দেখি ৭০ টাকা শর্ট। কি করুম হাসিলে কইলাম কিছু কম রাখা যাইবো নাকি। তারা মাথা নাড়ে, যাইবো না। তারপর রাখালরে ধরলাম কইলাম আপনে ১০০ দেন, গরু বাড়ি পৌছাইলে দিয়া দিমু। সেও তো রাজি হয় না। বহুত ক্যাচাকেচি কইরা অবশেষে রাখালের কাছ থাইকা ৫০ টাকা লইয়া মানিব্যাগের সর্বস্য ঢাইলা হাসিল ক্লিয়ার কইরা বাইড় হইলাম। রাত তখন দেড়টা।

পুরা পথ হাইটা আসলাম। মেজাজ চরম খারাপ। বিড়ি খাওনের পয়সাও মানি ব্যাগে নাই। পুরা ত্যাক্ত। সবারই মানিব্যাগ খালি হইয়া গেছে।

রানা সাহেবের মেজাজ তখনও খুব ভালো, তিনি কইতাছেন তোমাগো এইখানে সব হইলো ব্রিটিশ, দাতই হয় নাই গরু গছাইবার চায়। আমি শালার আরেক ব্রিটিশ। হে হে.........আর কেউ গরুর দাম জিগাইলেই তিনি উৎসাহব্যান্জ্ঞক স্বরে উত্তর দ্যান টোয়েন্টি ফাইফ, টোয়েন্টি ফাইভ।

বাসায় আসলাম রাত ২ টার পর। পরদিন সকাল ৮টায় আবার ঈদের জামাত। আর এরপরেরটা না হয় পরেই শুনলেন।
(বি:দ্র: আমি এর আগে কখনো নিজে গরু কিনি নাই....)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন